বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
নিষিদ্ধ চায়না দোয়ারী, প্লাস্টিকের ছাই, কারেন্ট ও কুনো জালের রমরমা ব্যবসা এবং মাছ ধরার মহোৎসব চলছে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। তবে জেনে শুনেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ফলে দেশি মাছ ও মাছের বংশ নিধন হচ্ছে অনায়েসেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বর্ষায় উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ব্যাপকভাবে মাছ ধরা হয়। মাছের বংশ নিধনে স্থানীয় প্রশাসনের নরম হুঁশিয়ারি থাকায় নিষিদ্ধ যন্ত্র দিয়ে ব্যাপকভাবে মাছ ধরা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে চায়না দোয়ারী, প্লাস্টিকের ছাই, কারেন্ট ও কুলো জাল উল্লেখযোগ্য। এগুলো মাছের ব্যাপক ক্ষতি করার পাশাপাশি বংশ নিধনেও কাজ করে। তাছাড়া চায়না দোয়ারী ও প্লাস্টিকের ছাই দিয়ে মাছ ধরার ফলে পানির নিচের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। ফলে দিন দিন দেশি মাছের সংখ্যা কমে গেলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্বিকার থাকতে দেখা যায়। মাঝে-মধ্যে নামকাওয়াস্তে অভিযান করা হলেও নিষিদ্ধ যন্ত্র দিয়ে মাছ ধরার পরিস্থিতি আগের মতোই থাকে।
মাছের রাজ্য খ্যাত ভাটি অঞ্চলের মাছ চাষের অন্যতম স্থান হচ্ছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা। এ উপজেলায় রয়েছে বিরাট হাওর ও বিল। যেখানে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার দেশি মাছ ধরা ও বিক্রি হয়। সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মৎস্যজীবিরা খাল-বিল ও নদীতে দেশি মাছসহ বিদেশি মাছও চাষ করেন। তাছাড়া সাধারণ মৎস্যজীবিরাও এসব স্থানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দেশি মাছের কদর বেশি থাকায় স্থানীয় মৎস্যজীবিরা আড়তদারদের কাছে অধিক দাম পাওয়ার আশায় তা বিক্রি করায় উপজেলার বাজারগুলোতে খুব কম মাছই পাওয়া যায়।
উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের চান্দপুর ও উত্তর চান্দপুর গ্রামের চিংড়ি আহরণকারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ছাই দিয়ে প্রতিদিন একেকজন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন কেজি চিংড়ি হাওরে আহরণ করে। প্রতি কেজি চিংড়ি তারা আড়তে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করে। শুধুমাত্র চিংড়ি আহরণকারী কতজন, তা নির্ধারণ করে কেউই বলতে পারে না। তারা জানায়, চিংড়ি ধরতে গিয়ে প্লাস্টিকের ছাইয়ে সামান্য পরিমাণে সাবান, সিদল সুটকি ও ব্রয়লার দিতে হয়। তা না হলে চিংড়ি বেশি পাওয়া যায় না। তাছাড়া চায়না দোয়ারী দিয়ে প্রচুর চিংড়ি ধরা হয় বলেও তারা জানান।
এদিকে কুনো ও কারেন্ট জালের অবাধ ও অবৈধ বিক্রি এবং ব্যবহারের ফলে বিলুপ্তির পথে দেশীয় জাতের মাছ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতা না থাকায় মাছ, পোনা ও মাছের ডিম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের আমিষ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে দিরাই উপজেলাবাসি। মাঝে-মধ্যে নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো অভিযানে কিছু কুনো ও কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হলেও এর ধারাবাহিকতা না থাকায় অভিযানের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন সচেতন মহল। ফলে দিরাইয়ের হাট-বাজারে দেশি মাছের আকাল লক্ষ্য করা যায়।
দিরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার শরীফুল আলম জানান, বর্তমানে দেশের স্বাদু পানিতে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। তবে এসব জাতের মাছ রক্ষা ও বংশ বৃদ্ধির লক্ষে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দিরাইয়ে চায়না দোয়ারী জাল কিছুটা কম রয়েছে। তাছাড়া প্লাস্টিকের ছাই, কুনো ও কারেন্ট জালের ব্যবসা, বিপণন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্র্তমানে বাজারে কোন দোকানে কারেন্ট জাল বিক্রি হচ্ছে না। প্লাস্টিকের ছাইয়ের কোন গুদাম নেই, সবগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে রাতের আঁধারে কেউ বিক্রি করলে সেটি আটকিয়ে রাখতে পারবো না। তাছাড়া এখন আর কেউ প্রকাশ্যে কুনো জাল দিয়েও মাছ ধরছে না।